শান্তিপুর,
শান্তিপুর হলো পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার, রানাঘাট মাহকুমার আধীনে প্রাচীন, সংস্কৃতি,ধর্ম,ঐতিহ্যের একটি জায়গা এবং এটির নিজস্ব গৌরব রয়েছে। ভগবান শ্রী চৈতন্য মহাপ্রভু অদ্বৈত আচার্যের কাছ থেকে সংস্কৃত পাঠ নিতে শান্তিপুরের বাবলা নামে পরিচিত জায়গাটিতে আসেন । এখানে আরও বলা যেতে পারে যে ভগবান শ্রী চৈতন্য যখন তিনি "পুরী" যাচ্ছিলেন শান্তিপুর এসে অদ্বৈত আচার্যের সাথে অদ্বৈত পথে সাত দিন অবস্থান করেছিলেন।
এই সেই পবিত্র স্থান যেখানে ভগবান বিজয় কৃষ্ণ গোস্বামী তাঁর গৌরবময় জীবনের দিনগুলি ধর্মীয় কর্মকান্ডে কাটিয়েছিলেন।বিদ্যাসাগর এবং আরও বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তি মন্তব্য করেছেন যে কেবলমাত্র শান্তিপুরের বাসিন্দারা পুরোপুরি বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারেন । শান্তিপুরের সংস্কৃতি একটি বিশেষ মান নিয়ে চলে। শান্তিপুরের কয়েকটি বিশেষ গান বাংলার সংগীতের পাঠকে সমৃদ্ধ করেছিল।শান্তিপুরের কয়েকটি মিষ্টি তার স্ব মানের জন্য আমাদের দেশে খুব বিখ্যাত ছিল। যার মধ্যে "খাসা-মোয়া", "নিখুটি", "জিবেগজা" এবং "মাখা সন্দেশ", "রোসাগোল্লা", "পান্টুয়া" এবং "জিলাপি" ইত্যাদি মিষ্টিও শান্তিপুরে পাওয়া পাওয়া যায়।
শান্তিপুর নাম হওয়ার কারণ কি ?
কেনো এই জায়গাটির নাম শান্তিপুর তা সঠিক ভাবে বলা যায়না। তবে সাধারণ ভাবে বলা হয় যে অষ্টম শতাব্দীতে (খ্রিষ্টান যুগে) "শান্তিবান" বা "শান্তমুনি" নামে একজন উচ্চপদস্থ সাধক এখানে বাস করতেন । তাঁর নাম অনুসারে এর নাম করেছিলেন শান্তিপুর। আবার অন্য দিকে অনেক লোক মন্তব্য করেছিলেন যে এই জায়গাটি বেশ ক্লান্তিহীন এবং জনশূন্য অবস্থার কারণে এই স্থান টিকে শান্তিপুর নামে ডাকা হয়। শান্তিপুর থানার অধীন শান্তিপুর পৌরসভার নামে দশটি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং একটি পৌরসভা রয়েছে।
শিল্পী, কারখানা ও জীবিকা,
প্রাচীন কাল থেকেই, সান্তিপুর এবং আশেপাশের অঞ্চল তাঁত শাড়ি জন্য বিখ্যাত ছিল।
শান্তিপুরে কোনো বড় আকারের শিল্প বা কারখানা নেই। তবে বড় শিল্প স্থাপনের গভীর প্রচেষ্টা শান্তিপুর বাসিন্দাদের মধ্যে সর্বদা দেখা যায়। শান্তিপুর কুটির শিল্প বিশ্বখ্যাত এবং সুনাম অর্জন করেছে। শান্তিপুর প্রধান শিল্প হলো তাঁত শিল্প। শান্তিপুরের এই তাঁত শিল্প মানব জীবনের সমসাময়িক প্রায়। তাঁত শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল এখানে উৎপাদিত হয়।
শান্তিপুরের সূত্রগড় এলাকার বেশিরভাগ মানুষ টেক্সটাইল ব্যবসায় ডুবে আছেন। এখানে একটি তাঁতের কাপড়ের বাজার রয়েছে। এই বাজার বা হাট টি সপ্তাহে দু'দিন রবিবার ও বৃহস্পতিবার সকাল 4 টা থেকে দুপুর 2 টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। কাছের গ্রামগুলির লোকেরা এই বাজারে ব্যবসা করতে আসে।
এখান থেকে তাঁত কাপড় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যায় এবং বিদেশেও রফতানি হয়।
তাঁতের শাড়ি স্টেশনের কাপড়ের বাজার, বড় বাজার, শান্তিপুরের বিভিন্ন পোশাকের দোকান
এবং ফুলিয়ার বিভিন্ন শাড়ির দোকানেও পাওয়া যায়।
শান্তিপুরের হাতে তৈরি শাড়িটি বিশ্বে বিখ্যাত।
আচার -অনুষ্ঠান ও উৎসব,
রাস,
শান্তিপুরের রাস উৎসবের খ্যাতি বিশ্বজোড়া।তবে এই উৎসবের নাম এখানে ভাঙা রাস । ভাঙা রাস নাম হওয়ার কারণ হলো পুরানে বলে, স্বয়ং মহাদেব ছদ্ধবেশে রাসে ঢোকায় ভেঙে গিয়েছিল শ্রী কৃষ্ণের রাস। কারণ রাস উৎসবে পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ ছাড়া আর কোনো পুরুষের প্রবেশাধিকার ছিল না। ধরা পড়ে গিয়ে মহাদেব বলেছিলেন, কলিতে তার সমস্থ ভক্তকে রাস দর্শণ করাবেন। শোনা ,যায় শান্তিপুরের প্রথম রাসের সূচনা করেন অদ্বৈতাচার্য ।বৈষ্ণব মতে রাস উৎসব শুরু হলেও পরে শাক্ত মতে এসে মেলে। বিভিন্ন দেবদেবীর পূজো হয় রাস পূর্ণিমাতে।
শহরের প্রধান উৎসব রাশযাত্রার দিনে তাদের সবাইকে , কীর্তন ও অন্যান্য উদযাপনের সাথে শহরের চারপাশে একটি বিশাল শোভাযাত্রায় বের করা হয়। কৌতূহলজনকভাবে, সমস্ত সিংহাসন আজ ও বৈদ্যুতিক আলোর পরিবর্তে বেলজিয়াম গ্লাস মোমবাতি এবং ঝাড়বাতি জ্বালানো হয় এটি রাশোৎসবকে খুব প্রাচীন এবং ঐতিহাসিক চেহারা দেয়। এই দিনে প্রায় আড়াইশো বছর আগে বড় গোস্বামিস প্রবর্তিত একটি ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা হিসাবে, এক যুবতী ব্যয়বহুল পোশাক এবং সোনার অলঙ্কার পরিহিত রাধারানীকে রাজা সাজিয়ে একটি সিংহাসনে করে শহর জুড়ে ঘোরানো হয় এটি রাই রাজা নামে পরিচিত ।
সেই শোভাযাত্রা নিয়ে মেতে ওঠেন মানুষ। শান্তিপুরের রাস নদীয়া জেলার ধর্মীয় অনুষ্ঠান গুলির মধ্যে অন্যতম। শুধু জেলা নয় জেলার বাইরের থেকে ও অগণিত মানুষ ভিড় জমান এই উৎসবে। শান্তিপুরের ভাঙা রাসের অন্যতম আকর্ষণ হলো শোভাযাত্রা।এক দিকে বিগ্রহবাড়ির ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব, অন্য দিকে নানা বারোয়ারির আকর্ষণীয় থিম। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মেলবন্ধনের সম্পদ সমৃদ্ধ করে এসেছে শান্তিপুরের রাস উৎসবকে।
কালিপুজো,
কালী পূজা হল শান্তিপুরের আরও একটি বড় উৎসব ।শান্তিপুরের প্রায় তিনশসত্তর বছরের প্রাচীন ঈশ্বরী শ্রী শ্রী আগমেশ্বরী কালিমাতার পূজা কাহিনী।
দক্ষিণাকালির রুপকারের তিন’শো সত্তর বছরের বেশি প্রাচীন পুজো। ঘোর অমাবস্যার রাত। এক তান্ত্রিক বসেছেন তন্ত্রসাধনায়। সামনে দেবীমূর্তিকে তিনি তৈরি করেছেন নিজের হাতে।পুজো শেষ হতেই ভোর হওয়ার আগেই দেবীমূর্তিকে বিসর্জন দেবেন তিনি। এমনই পুজো চলে প্রতি অমাবস্যায়। এই তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। “আগম” শব্দের অর্থ তন্ত্র। আর তন্ত্রের পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ উপাধি পেলেন আগমবাগিশ।"পটেশ্বরী" নামে পরিচিত দেবীর হাতে আঁকা চিত্রের আকারে কালী উপাসনা উদযাপনের এক অনন্য রূপ রয়েছে যার অর্থ একটি টুকরোয় দেবতার অঙ্কন। পূজার দ্বিতীয় দিনটি একটি ছাগলের বলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শান্তিপুরে আরো ও বহু বছরের পুরনো কালি পুজো হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম (সাধনা কালি , পতালকালি ,বম্বেট কালি , চাদুনি মা ইত্যাদি। )
শান্তিপুরের প্রায় তিনশসত্তর বছরের প্রাচীন ঈশ্বরী শ্রী শ্রী আগমেশ্বরী কালিমাতার পূজা কাহিনী।
দক্ষিণাকালির রুপকারের তিন’শো সত্তর বছরের বেশি প্রাচীন পুজো। ঘোর অমাবস্যার রাত। এক তান্ত্রিক বসেছেন তন্ত্রসাধনায়। সামনে দেবীমূর্তিকে তিনি তৈরি করেছেন নিজের হাতে।পুজো শেষ হতেই ভোর হওয়ার আগেই দেবীমূর্তিকে বিসর্জন দেবেন তিনি। এমনই পুজো চলে প্রতি অমাবস্যায়। এই তন্ত্রসাধক কৃষ্ণানন্দ আগমবাগীশ। “আগম” শব্দের অর্থ তন্ত্র। আর তন্ত্রের পণ্ডিত কৃষ্ণানন্দ উপাধি পেলেন আগমবাগিশ।"পটেশ্বরী" নামে পরিচিত দেবীর হাতে আঁকা চিত্রের আকারে কালী উপাসনা উদযাপনের এক অনন্য রূপ রয়েছে যার অর্থ একটি টুকরোয় দেবতার অঙ্কন। পূজার দ্বিতীয় দিনটি একটি ছাগলের বলি দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। শান্তিপুরে আরো ও বহু বছরের পুরনো কালি পুজো হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম (সাধনা কালি , পতালকালি ,বম্বেট কালি , চাদুনি মা ইত্যাদি। )
জগদ্ধাত্রী পূজা,
শান্তিপুরের সূত্রগড় এলাকায় জগদ্ধাত্রী পূজা উদযাপিত হয়। সূত্রগড়ের জগদ্ধাত্রী পূজা প্রায় 350 বছরেরও বেশি পুরানো বলে অনুমান করা হয়। সমস্ত জগদ্ধাত্রী প্রতিমা এখনও এই স্থানে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নামে পূজা করা হয়। এখানকার জগদ্ধাত্রী পূজাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন দেবদেবীর আয়োজন করা হয়েছিল। (কালী, সন্তোষী মাতা, ভারত মাতা, দুর্গা, কমোলেকামিনী, অন্নপূর্ণা, নারায়ণ, নটরাজ এবং অন্যান্য ) |
জগদ্ধাত্রী পূজা এখানে তিন দিনের জন্য অনুষ্ঠিত হয় এবং তিন দিনের পূজার পরে, প্রতিমা একটি আলোকময় শোভাযাত্রা মাধ্যমে প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
শান্তিপুর কিন্তু শুধু চৈতন্যতীর্থই নয়। ইংরেজ আমল পর্যন্ত শহরটির রীতিমতো গুরুত্ব ছিল। এক সময় শান্তিপুরে প্রচুর নীল ও রেশম চাষ হত। এই রেশম কুঠি সেই ইতিহাসের সাক্ষী। কিন্তু অবহেলা আর অনাদরে আজ তার পুরোটাই ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। শুধু এই হাতিশালাটাই কোনও মতে টিকে আছে।শুধু নীলকুঠি কিংবা রেশমকুঠিই নয়। শান্তিপুরের সর্বত্র এ ভাবেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র স্থাপত্য আর ইতিহাসের নানা উপকরণ। সেই তালিকায় যেমন রয়েছে মোগল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের নামের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে থাকা তোপখানার মসজিদ, ইটের তৈরি আটচালার শ্যামচাঁদ মন্দির, ঔরঙ্গজেবের সেনাপ্রধান গাজী ইয়ার মহম্মদের তৈরি তোপখানা মসজিদ, ১৭৯৬ সালে তৈরি দানবীর মরহুম শরিবত সাহেবের তৈরি সুদৃশ্য মসজিদ, ওস্তাগর পাড়ার মসজিদ-সহ প্রায় ২৬টি মসজিদ,
এ ছাড়াও রয়েছে শান্তিপুরের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা বড় গোস্বামী বাড়ি-সহ ২৪টি বিগ্রহবাড়ি। তার মধ্যে ৯টি গোস্বামীবাড়ি বলেই পরিচিত। শান্তিপুর শহরের একেবারে লাগোয়া এলাকায় রয়েছে অদ্বৈতাচার্যের সাধনক্ষেত্র অদ্বৈতপীঠ। সেই সঙ্গে আছে একাধিক শিব ও কালী মন্দির। যেমন আগমেশ্বরী মন্দির, সিদ্ধেশ্বরী কালীবাড়ি, গোকুলচাঁদ মন্দির, বংশীধারী শিবমন্দির, সূত্রাগড়ে গণেশ মন্দির, জলেশ্বরের শিবমন্দির, শ্যামচাঁদ মন্দির। এই সব মন্দির ও বিগ্রহবাড়ির সঙ্গে শুধু যে ইতিহাস জড়িয়ে আছে তাই নয়, এই সব মন্দিরের গায়ে পোড়ামাটির কাজ বাংলার অন্যতম দর্শনীয় বিষয়।ইটের তৈরি আটচালার শ্যামচাঁদ মন্দির,
যোগাযোগ।
শান্তিপুর শহর বাস ও রেল যোগাযোগের মাধ্যমে রাজ্য রাজধানী কলকাতা ও জেলা সদর কৃষ্ণনগরের সাথে যুক্ত। কলকাতা হতে শান্তিপুরের ওপর দিয়ে ৩৪ নং জাতীয় সড়ক অতিক্রম করেছে। রেলপথে শিয়ালদহ রেলওয়ে স্টেশন হতে সরাসরি শান্তিপুর বিদ্যুৎচালিত ট্রেনের মাধ্যমে সংযুক্ত। অতীতে শান্তিপুর - কৃষ্ণনগর - নবদ্বীপ ঘাট ন্যারো গেজ রেলপথ ছিল। অধুনা তা ব্রড গেজে রূপান্তরিত হয়েছে। ভাগীরথী নদীর অপর পাড়ে বর্ধমান জেলার কালনা ও হুগলী জেলাস্থিত গুপ্তিপাড়ার সাথে শান্তিপুর নৌকা পথে যুক্ত।
Know For More Informatin Please visit our
youtube channal: Heritage Place Info
facebook page : Heritage Place Info Instagram: Heritage Place Info